বিশেষ খবর



Upcoming Event

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ জাতীয় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে

ক্যাম্পাস ডেস্ক সংবাদ
img

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীদের জয়লাভের পর এ নিয়ে রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উচ্ছাস, বিপুলসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি এবং দিনভর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ হওয়া এই নির্বাচনের প্রভাব শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর ফল জাতীয় রাজনীতিতে, বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। ঐতিহ্যগতভাবে এখান থেকেই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন তাদের নেতৃত্ব তৈরি করে এসেছে। ফলে ডাকসু নির্বাচনে যে ছাত্র সংগঠন জয়ী হয়, তা সেই ছাত্র সংগঠনের মূল দলের জনপ্রিয়তা ও জনভিত্তির একটি প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের ডাকসু নির্বাচনের ফলও বিজয়ী প্রার্থীর মূল দলকে আগামী সংসদ নির্বাচনে খানিকটা এগিয়ে রাখতে পারে। এবারের ডাকসু নির্বাচন অনেকে দেখছেন নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক রুচি ও প্রবণতা যাচাইয়ের একটি সুযোগ হিসেবে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে কোন আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, তা এই নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে। যেহেতু আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের সংখ্যা ৩ কোটির বেশি, তাই ডাকসু’র ফল রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য এ নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছে বড় দলগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন যতটা না ছাত্ররাজনীতির, তার চেয়ে বেশি জাতীয় রাজনীতির একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচনের ফল শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নয়, দেশের রাজনীতি এবং জাতীয় নির্বাচনের গতিপথও নির্ধারণ করতে পারে। ডাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর প্রচার ঘিরে সৃষ্ট উন্মাদনা শুধু ঢাবি ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সর্বমোট ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থীর ভোটাধিকারের এ নির্বাচন ঘিরে গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যন্ত আলাপ-আলোচনায় ছিল ডাকসু। জাতীয় গণমাধ্যমগুলোও প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনামে রেখেছে এ নির্বাচন। ভোটের আগের দিন থেকে শুরু করে ফল ঘোষণার মুহূর্ত পর্যন্ত সার্বক্ষণিক নজর ছিল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে কারচুপি, জোরজবরদস্তি ও দলীয় প্রভাবের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা যে হতাশায় ভুগছিল, এবার তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে অনেকটাই। ভোর থেকেই ক্যাম্পাসে ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ করা যায়। আবাসিক হল থেকে শুরু করে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও দলবেঁধে ভোট দিতে আসেন। শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, উদয়ন স্কুল কিংবা কার্জন হলÑ প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উপচে পড়া। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, এ নির্বাচন ছিল ‘প্রহসনের জবাব’। দীর্ঘদিন পর স্বাধীন ও তুলনামূলক নিরপেক্ষ পরিবেশে ভোট দিতে পারার আনন্দ তাদের চোখেমুখে স্পষ্ট ছিল। ভোট দেওয়া মানে যে উৎসব, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যা একসময় ছিল সাধারণ চিত্র, এবার তার প্রতিফলন দেখা গেছে ডাকসু নির্বাচনের ময়দানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই নারী শিক্ষার্থী। এবারের নির্বাচনে নারী ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নজর কেড়েছে সবার। ভোট গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে বিপুলসংখ্যক নারী শিক্ষার্থীকে ভোট দিতে দেখা গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হিসাবে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সমানতালে। নারী ভোটারদের ভাষ্য, নিরাপদ পরিবেশে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে পারাটা ছিল তাদের বড় একটি অভিজ্ঞতা। তাদের মতে, ২০১৯ সালের ভোটের মতো ভয়ভীতি এবার ছিল না। প্রত্যেকেই নিজেদের মতামত প্রকাশে স্বাধীন ছিলেন। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ শুধু পরিসংখ্যানে নয়, প্রতীকী দিক থেকেও গুরুত্ব বহন করছে। ডাকসু নির্বাচনে এবার যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, তা হলো রেকর্ডসংখ্যক ভোট প্রদান। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কার্জন হলে পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ৮৩ শতাংশ, উদয়ন স্কুল কেন্দ্রে ৮৫ শতাংশ এবং অন্যান্য কেন্দ্রেও ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশের ওপরে। এ পরিসংখ্যান শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নয়, দেশের সা¤প্রতিক নির্বাচনী বাস্তবতায়ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ভোটের হার প্রমাণ করে, শিক্ষার্থীরা যদি আস্থা পায় এবং সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছতে পারে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, ডাকসু নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির জন্য এক ইতিবাচক বার্তা হয়ে এসেছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল, প্রচারের সময় থেকে ভোট গ্রহণের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের সহিংসতা বা কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেনি। যদিও বিচ্ছিন্ন কিছু অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, তবে তা নির্বাচনের সামগ্রিক চিত্রে প্রভাব ফেলেনি। প্রার্থীরা অভিযোগ তুললেও ভোটারদের কাছে নির্বাচন ছিল উৎসবমুখর। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ডাকসু নির্বাচনে এই ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সারা দেশের মানুষের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img