প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠনের সফলতার পর এবার দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গঠন করা হচ্ছে স্টুডেন্টস কেবিনেট। প্রথম পর্যায়ে ৮ আগস্ট ১০০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে এ কেবিনেট গঠন করা হয়। সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচন করা হয় কেবিনেট সদস্য।
মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় শিক্ষা সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম খানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, কিশোর বয়স থেকে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র চর্চা থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন শিখবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখন-শিখানো কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। মোট সাত উদ্দেশ্য মাথায় রেখে স্টুডেন্ট কেবিনেট গঠন করা হবে। সেগুলো হলোÑ কৈশোর থেকে ছাত্রদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা, অন্যের মতামতের প্রতি সহিঞ্চুতা ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে শিক্ষকদের সহায়তা, ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষা কার্যক্রমে অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, পরিবেশ উন্নয়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
পরীক্ষামূলকভাবে দেশের প্রত্যেক উপজেলা ও মহানগরে মাধ্যমিক পর্যায়ে তিনটি করে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠন করবে। বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ভোটার তালিকাভুক্ত যে কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে। প্রত্যেক ভোটার প্রত্যেক শ্রেণিতে একটি এবং সর্বোচ্চ তিনটি শ্রেণিতে দুটি করে মোট আটটি ভোট প্রদান করতে পারবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একজন করে এবং অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে দু’জন করে আটজন শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি নিয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠিত হবে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এ নির্বাচন হবে সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিকভাবে। প্রার্থীরা হাতে লেখা একাডেমিক ও শিক্ষা উন্নয়নমুখী সেøাগান সংবলিত পোস্টার ব্যবহার করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নির্বাচন কমিশনার, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
মন্ত্রী বলেন, এ বছর দেশের ৪৮৭টি উপজেলা ও আটটি মহানগরে এক হাজার ৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ৪৯৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৮৭টি দাখিল মাদ্রাসা ও ৬১টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবার মোট ভোটার সংখ্যা ছয় লাখ ২৪ হাজার ৫৩২ জন। নির্বাচনে আট হাজার ৩৪৪টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৪৩ জন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইনে চলে। তারা স্বায়ত্তশাসিত, অনেক ক্ষেত্রে বলতে পারি প্রায় স্বাধীন। আমরা শতভাগ টাকা দেই, কিন্তু ক্ষমতা খাটাই শূন্যভাগ। মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচিত সিনেট রয়েছে, শুধু নির্বাচন করাই বড় ব্যাপার নয়। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, সুস্থ মানসিকতা, পরিবেশ, গাছ লাগানো ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে হয়, হয়ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয় না। আমরা বার বার তাদের তাগিদ দেই। তারা সাহস করে করতে পারেন না। আমরা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারি না, আপনি কাল নির্বাচন করেন। আমরা প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করি। সেই দায়িত্ব দিয়ে তারা না করলে আমরা তো দায়িত্ব নিতে পারব না।