বিশেষ খবর



Upcoming Event

ক্যাম্পাস পরিচালিত ফ্রি সেমিনারঃ How to Develop Relationship

ক্যাম্পাস ডেস্ক ক্যাম্পাস’র অনুষ্ঠান
img

ক্যাম্পাস পরিচালিত ফ্রি সেমিনারঃ How to Develop Relationship মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে সম্পর্ক বা Relation গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস পরিচালিত ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড এর ৩২তম পর্ব। ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উক্ত সেমিনারের বিষয় ছিল How to Develop Relationship. অর্থাৎ কীভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়।
ব্যক্তিসত্তার যথার্থ বিকাশ, মানবিক মূল্যবোধ ও আত্মশক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের প্রক্রিয়া হিসেবে ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) নিয়মিত পরিচালনা করে ফ্রি প্রোএকটিভ সেমিনার। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলালের সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে মূল বক্তা ছিলেন প্রোএকটিভ এটিচিউডের ক্যারিশমেটিক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান।
ড. আলমাসুর রহমান
নান্দনিক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েরা আইটিতে অনেক দক্ষ, অনেক কিছু জানে। তবে আইটি শিক্ষায় অগ্রসর হলেও বই পড়ায় তারা অনেক পিছিয়ে। বই না পড়লে জ্ঞানের পরিধি বাড়বে না। মনের দিগন্ত খুলবে না। আবার দেখা যায়, অভিভাবকরা সন্তানদের সারাদিন শুধু পাঠ্যবই পড়ার নির্দেশ দিচ্ছেন পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য। কিন্তু জ্ঞান আহরণের জন্য অন্য বই পড়তে বলছেন না। এতে বইয়ের প্রতি তার ভীতি তৈরি হচ্ছে, বইয়ের প্রতি তার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না। আমরা যদি বইয়ের প্রতি সন্তানদের সম্পর্ক গড়ে দিতে পারি, তাহলে তারা নিজেরাই আনন্দের সাথে বই পড়বে।
ড. আলমাস ছাত্র-তরুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অনেকেই সরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই স্বল্প বেতনে পড়াশুনা করেছেন বা করছেন। মনে রাখবেন, আপনাদের পড়ার মূল খরচের যোগান দিয়েছে এদেশের সাধারণ মানুষ। তাই কর্মজীবনে তাদের সেই অবদানের কথা ভুলে যাবেন না; তাদের ঋণ শোধ করতে হলে তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। ড. আলমাস বলেন, ফিজিকাল Health জন্য আমরা অনেক কিছু করি, কিন্তু Mental Health এর উন্নয়নে তেমন কিছু করি না। Mental Health এর উন্নয়ন না হলে Abnormality দেখা দেবে, মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট হবে। তিনি বলেন পারিবারিক, সামাজিক সকল ক্ষেত্রে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে Abnormality এর কারণে। সমাজে Abnormal মানুষের সংখা বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সম্পর্কের উন্নয়ন অতীব জরুরি বিষয়। রিলেশনশিপ না থাকলে সমাজ-সংসার স্বাচ্ছন্দ্যভাবে চলতে পারে না। তাই সবার সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে। সুসম্পর্কের সঞ্চয় মানুষের জীবনের বড় সম্পদ।
ড. আলমাস বলেন, মানুষ কাজ করে পরিচিত হবার জন্য। টাকা রোজগার করে টাকার বস্তার উপর বসে থাকার জন্য নয়। এজন্য তার সামাজিক যোগাযোগ বাড়তে হবে, বিভিন্ন মহলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। অনেকে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, কিন্তু তা ধরে রাখতে পারে না। এ ব্যর্থতার জন্য সাফল্য তার কাছে ধরা দেয় না। অন্যের সাথে যিনি যত বেশি সম্পর্ক গড়তে পারবেন, তিনি তত সফল হবেন।
ড. আলমাস বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে IQ এর চেয়ে EQ যাদের বেশি, সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত সফল। ইমোশন, আবেগ-অনুভূতিকে বোঝার দক্ষতাই হলো EQ । উদারহরণস্বরূপ দু’জন ম্যানেজারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক ম্যানেজারের কাছে তার একাউন্টেন্ট ছুটি নিতে গিয়ে বললেন অফিসে আসার সময় দেখেছি, আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ; এখন টেলিফোন পেলাম, তাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে; বাকি বেলা আমাকে ছুটি দিন স্যার। ম্যানেজার তার কথা কানেই তুললেন না। ভাবখানা স্ত্রীর অসুখ তাতে হয়েছে কি! স্ত্রী থাকলে অসুখ হবেই। বললেন, এখন যান হাতের কাজ শেষ করে বিকেলে ঘন্টাখানেক আগে চলে যাবেন। একাউন্টেন্ট বিষন্ন মনে ফিরে গেলেন। ম্যানেজারের কাছ থেকে এতটুকু সহযোগিতা, সহানুভূতি পেলেন না। অন্য এক ম্যানেজারের কাছে তার একাউন্টেন্ট একই কথা বলে ছুটি নিতে গেলে তিনি উল্টো একাউন্টেন্টকে বকা দিলেন আপনি স্ত্রীকে অসুস্থ দেখেও অফিসে চলে এসেছেন! এখন তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান; টাকা-পয়সা যদি লাগে নিয়ে যাবেন, আর দরকার মনে করলে অফিসের গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। ফোনে আপনার স্ত্রীর অবস্থা জানাবেন। একাউন্টেন্ট গভীর প্রশান্তি নিয়ে ফিরে গেলেন, তার মাথা থেকে টেনশনের এক বিরাট বোঝা নেমে গেলো। এ ম্যানেজারের অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করবে। আর এর মাধ্যমে এই ম্যানেজার সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবেন। তার EQ বেশি বলেই তিনি সম্পর্ক স্থাপনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন। অন্যদিকে প্রথম ম্যানেজার যিনি স্টাফের বিপদে সহানুভূতি না দেখিয়ে তাকে কাজের জন্য চাপ দিয়ে নির্মমতার পরিচয় দিয়েছেন, তার EQ শূন্যের কোঠায়; তিনি সফল হতে পারবেন না।
ড. আলমাস বলেন, একজন সর্বোচ্চ বেতনধারী জিএম এর সাফল্যের রহস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান আমি আমার স্টাফদের ভালোবাসি, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখি, তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হই, আমার আনন্দ তাদের সাথে শেয়ার করি। এজন্য তারা প্রাণান্ত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানকে টপ পজিশনে নিয়ে এসেছে। আর আমি তাদের মাধ্যমে সফল হয়েছি। ড. আলমাস বলেন, সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি বাধা হচ্ছে Judgemental Attitude. আমাদের ৮০% কথা জাজমেন্টাল তথা সিদ্ধান্তপ্রদায়ী! এজন্য আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমরা ভুলে যাই আমরা মতামত দিতে পারি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নয়। কথা বলার আগে ভাবতে হবে এর প্রভাব কোথায় যাচ্ছে, কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। সিদ্ধান্তমূলক আচরণ, রায় দেয়ার অভ্যাস যাদের রয়েছে তাদেরকে মানুষ পছন্দ করে না। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বন্ধুদের আড্ডায় আপনি বললেন কালো কাপড় একদম খারাপ! কিন্ত একই আড্ডায় কেউ কেউ কালো কাপড় পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে আপনার সাথে অন্যদের দ্বিমত সৃষ্টি হলো, সম্পর্কেও চিড় ধরলো। কালো কাপড় খারাপ না বলে আপনি যদি বলতেন, কালো কাপড় আমার পছন্দ না। অর্থাৎ আপনি সিদ্ধান্ত না দিয়ে যদি মতামত জানাতেন, তাহলে অন্যদের সাথে আপনার সম্পর্ক রক্ষা পেত।
ড. আলমাসুর রহমান বলেন, সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে Respect বা শ্রদ্ধাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার প্রতি শ্রদ্ধা যত বেশি, তার প্রতি সুমধুর ব্যবহারও তত বেশি; সম্পর্কও তত ভালো। আর যার প্রতি শ্রদ্ধা কম, তার প্রতি ব্যবহারও তত খারাপ, সম্পর্কও ভালো না। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তিকে প্রথম দর্শনেই তার সম্পর্কে মনের মধ্যে একটা ইমেজ গড়ে ওঠে। কারো সাথে কীরকম ব্যবহার হতে পারে, তা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তি নয়, উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন বা ধারণা। মনের মধ্যে কারও সম্পর্কে তৈরি হওয়া ইমেজই হবে ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিফলন। প্রাইমারি শিক্ষক আমাদের মানুুষ করেছেন, তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থাকতে হবে। বর্তমানকার উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রাইমারি শিক্ষককে ভুলে গেলে, তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তা হবে চরম অমানবিক। সবাইকে যখন Respect করতে পারা যাবে, তখন সম্পর্কের প্রসার ঘটবে।
ড. এম হেলাল
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল বলেন ছাত্র-যুব উন্নয়নে ক্যাম্পাস মাল্টিডায়মেনশনাল ২৪টি কর্মসূচি পরিচালনা করছে; যার অন্যতম হচ্ছে প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড সেমিনার। এ সেমিনারের মাধ্যমে ছাত্র-তরুণসহ যেকোনো অংশগ্রহণকারী আলোকিত জীবনের সন্ধান পান; সেমিনার শেষে তারা হয়ে ওঠেন একজন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। তারা বুঝতে পারে জীবন-সংগ্রামে নামতে হলে তাদেরকে কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তারা ভাবতে শুরু করেন এতদিন তারা কী ছিলেন, কীভাবে জীবন অতিবাহিত করেছেন, কী সম্পদ তারা হারিয়েছেন।
ড. হেলাল বলেন আজকের আলোচ্য বিষয় How to Develop Relationship এর গুরুত্ব ছাত্র-তরুণরা অনুধাবন করবে। কেননা Relationship ছাড়া সমাজ ও জাতীয় পর্যায়ে সফল হওয়া যাবে না। সমাজে যতবেশি মানুষের সাথে পারষ্পরিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে, সমাজ ততবেশি এগিয়ে যাবে। তাই ব্যক্তিজীবনে এবং সামাজিক জীবনসহ সর্বক্ষেত্রেই সম্পর্ক বা Relationship-ই সবচাইতে বড় সম্পদ।
ক্যাম্পাস’র পরবর্তী প্রোএকটিভ সেমিনার হবে ৮ মার্চ, ২০১৮; ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে বিকাল সাড়ে ৫টায়। বিষয়ঃ Know Thyself..


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img