প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রেষণে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
নতুন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের অভাব পূরণের এবং উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
ইউজিসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, উচ্চশিক্ষা খাতের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। ঢাকার বাইরে বা শহরাঞ্চল থেকে দূরেও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ শিক্ষক তেমন নেই। নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সংকটে ভুগছে। এটা বিবেচনায় নিয়েই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের প্রয়োজনে প্রেষণে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বদলির ব্যবস্থা না থাকায় এই সুপারিশ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে এটি জরুরি পদক্ষেপ হতে পারে।
ইউজিসি’র বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৪ তে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন সংসদের চলতি অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে। দেশের মোট ১১৭টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপককে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেষণে পাঠানো যেতে পারে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা যাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করতে পারেন, এর জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অথবা কর্মরত (লিয়েনে) শিক্ষকদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করে তাঁদের দক্ষতাকে শিক্ষার মানোন্নয়নের কাজে লাগানো যেতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। ইউজিসির পক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি ডাইরেক্টরি তৈরি করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো যাবে বলেও জানানো হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর পদে স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করতে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ইউজিসি’র কর্মপরিধি বৃদ্ধি এবং ক্ষমতায়নের দাবিও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউজিসি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল প্রতিষ্ঠান। এ জন্য ইউজিসিকে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি।
ইউজিসি’র গত তিন বছরের প্রতিবেদন তুলনা করে দেখা গেছে, এবারের প্রতিবেদনে আগের অনেক সুপারিশের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে ইউজিসির উদ্বেগের বিষয়টি এবারের প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স শিক্ষকই প্রশ্নপত্র প্রণেতা এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী। বাইরের একজন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে প্রশ্নপত্রের মান ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের যথার্থতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুই পরীক্ষক’ পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন যেমন কঠিন, তেমনি মূল্যায়নে দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। প্রায় শত বছরের পুরনো এ পদ্ধতি সময়ের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে ইউজিসির প্রতিবেদনে। তাদের মতে, উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটলেও শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
সুপারিশমালায় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রম যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয়, উন্মুক্ত ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ ৩১ হাজার ৬৯০ জন; শিক্ষকের সংখ্যা ১২ হাজার ৪৭ জন; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১ঃ১৯। আবাসন সুবিধা পাচ্ছে ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ৪৩২ জন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৩২৬ জন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৩০ হাজার ৭৩০ জন; শিক্ষকের সংখ্যা ১৪ হাজার ২১৯ জন; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:২৩। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৬৪৩ জন।